জাদুকরী উদ্ভিদ অ্যালো বার্বাডেন্সিস মিলার!😯😱
অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী আমাদের সবারই সুপরিচিত একটি ভেষজ উদ্ভিদ। অ্যালোভেরা উদ্ভিদটি স্বাস্থ্য, সৌন্দর্য, এবং ত্বকের যত্নের ওষধি বৈশিষ্ট্যগুলির জন্য শতাব্দী ধরে পরিচিত এবং ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আজ থেকে ছয় হাজার বছর পূর্বে মিশরে অ্যালোভেরার উৎপত্তি হয়। অ্যালোভেরা নামটি আরবি শব্দ "অ্যালোহ" থেকে এসেছে যার অর্থ "জ্বলজ্বলিত তিক্ত পদার্থ" এবং ল্যাটিন ভাষায় "ভেরা" অর্থ "সত্য"। ২০০০ বছর আগে গ্রীক বিজ্ঞানীরা অ্যালোভেরাকে সর্বজনীন প্যানাসিয়া ( সর্বরোগ নিবারক ঔষধ) হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন এবং মিশরীয়রা অ্যালোভেরা-কে "অমরত্বের উদ্ভিদ" বলে অভিহিত করেছিলেন। মিশরীয় রানী নেফারতিতি এবং ক্লিওপেট্রা তাদের প্রতিদিনের সৌন্দর্য চর্চায় নিয়মিত অংশ হিসাবে এটি ব্যবহার করে থাকতো। আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট এবং ক্রিস্টোফার কলম্বাস সৈন্যদের ক্ষতের চিকিৎসার জন্য এটি ব্যবহার করেছিলেন। এছাড়াও ইতিহাসবিদদের অনেকেই ছিলেন যারা নিয়মিত ঘৃতকুমারীর রস সেবন করতেন তার মধ্যে নেপোলিয়ন, সম্রাট আলেকজান্ডার, মহাত্মা গান্ধী এবং বাদশা সুলাইমান ছিলেন উল্লেখযোগ্য।
![]() |
Aloe vera gel |
অ্যালো পরিবারে কয়েক শত রকমের অ্যালোভেরা আছে। কিন্তু, মানুষের ব্যবহারের জন্য হাতেগোনা কয়েকটি শুধু উপযোগী এবং উপকারী। সবথেকে উপকারী যে প্রজাতিটির বৈজ্ঞানিক নাম অ্যালো বার্বাডেন্সিস মিলার। ডক্টর ফিলিপ মিলার লন্ডনের চেলসি ফিজিক গার্ডেনে প্রধান উদ্ভিদবিদ তাঁর বহু ভ্রমণের মধ্য দিয়ে তিনি সারা বিশ্ব জুড়ে বিস্ময়কর জাতের উদ্ভিদের সন্ধান পেয়েছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ-এর ক্যালিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ বার্বাডোস ছিল ঐতিহাসিক স্থান যেখানে উদ্ভিদবিদ এবং এক্সপ্লোরার ডক্টর ফিলিপ মিলার বিষ্ময়কর অ্যালোভেরা প্রজাতি আবিষ্কার করেছিলেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ভিদটির বোটানিকাল নাম অ্যালো বার্বাডেন্সিস মিলার প্রদান করেছিলেন। এটি লিলিয়াসি পরিবারের অন্তর্গত এবং একটি বহুবর্ষজীবী, মটর-সবুজ বর্ণের উদ্ভিদ। এটি আফ্রিকা, এশিয়া, ইউরোপ এবং আমেরিকার শুষ্ক অঞ্চলে জন্মে। এই প্রজাতির অ্যালোভেরার পাতা ৩ থেকে ৪ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। এদের হলুদ রঙের ফুল হয় এবং ফুল সহ এর উচ্চতা হয় ৫ থেকে ৬ ফুট। ৪০-৪৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় এটি উৎপাদিত হয়। তিন থেকে চার বছর সময় লাগে এটি প্রাপ্তবয়স্ক হতে( কমপক্ষে ৩৬ মাস)। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে এই গাছ অবশ্য বিভিন্ন মজার নামে পরিচিত যেমন অলৌকিক গাছ বা মিরাকেল প্লান্ট, বার্ন প্লান্ট এবং মেডিসিনাল এ্যালো ইত্যাদি।
অ্যালো বার্বাডেন্সিস মিলারে প্রাকৃতিকভাবেই রয়েছে ২০০ টির অধিক পুষ্টি উপাদান। যার মধ্যে ২০টি মিনারেলস (ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, ক্রোমিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাংগানিজ, কপার, জিংক ইত্যাদি) ৭৫টি-নিউট্রিয়েন্টস, ১২ রকমের ভিটামিন ( ভিটামিন এ, বি-১ , বি-২, বি-৩, বি-৬, বি-১২ ,সি এবং ই ইত্যাদি) এবং গুরুত্বপূর্ণ ১৯টি অ্যামাইনো এসিড যা আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং উপকারী। এই সকল উপাদান মানবদেহে সুস্থ পরিপাকতন্ত্র ও দৈনিক শক্তি বজায় রাখতে সহযোগিতা করে। এই অ্যালোভেরা টির মধ্যে স্যাপনিন নামের একটি সাবান ধর্মী ন্যাচারাল ক্লিনজার উপাদান পাওয়া যায় যা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং ফাংগাসের বিরুদ্ধে চমৎকার ফলাফল দেয়। লিগনিন নামের আরেকটি উপাদান পাওয়া যায় এতে যা আমাদের ত্বকের মধ্যে দিয়ে খুব দ্রুত ঢুকতে পারে। এটি অন্য পুষ্টি উপাদান মানবদেহের কোষে বহনের চমৎকার বাহনও বটে। এছাড়া নিপাসেস এবং প্রটোসেস নামের দুটি এনজাইম রয়েছে এর মধ্যে যা হজম প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। এতে একটি লং চেইন সুগার( লম্বা শিকলযুক্ত চিনি) বা মনোপলিস্যাকারাইড ও পলিস্যাকারাইড রয়েছেন যা মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেমকে মজবুত করতে সাহায্য করে। পরিশেষে অ্যালোভেরার যে পুষ্টি উপাদানের কথা বলব সেটি হচ্ছে স্যালিসাইলিক এসিড। এটি অ্যাসপিরিনের মতো একটি প্রদাহনাশক এবং মৃত কোষ কে ভেঙে ফেলতে খুব পারদর্শী। এই কারণেই আলোভেরা খেলে দেহের ব্যথা বেদনা কমে আসে। অতএব, উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা এটা বুঝতে পারছি যে, আপনার আমার দৈনন্দিন সুস্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য রক্ষায় নিশ্চয়তা দিতে অ্যালোভেরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।